প্রান্তজনের কন্ঠস্বরঃ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় অন্তর্ভুক্তিম‚লক নীতিমালা প্রণয়ন’ গবেষণার আলোকে সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় পলিসি ক্লিনিকের আয়োজন করেছে।
আজ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) তৃতীয় পলিসি ক্লিনিকের আয়োজন করেছে যেখানে ‘প্রান্তজনের কন্ঠস্বরঃ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় অন্তর্ভুক্তিম‚লক নীতিমালা প্রণয়ন’ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ এবং পর্যালোচনার পাশাপাশি বিকল্প নীতি সুপারিশ করা হয়। পলিসি ক্লিনিক এমন একটি অভিনব প্রক্রিয়া যেখানে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণসম‚হ যাচাই করেন এবং প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে অগ্রাধিকার দেয়ার উপর জোর দেন। এই গবেষণা প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি পলিসি ক্লিনিকের মধ্যে এটি শেষ পলিসি ক্লিনিক যা আজ আয়োজিত হয়।
এই ৩য় পলিসি ক্লিনিকে গবেষণাটির ৩য় পর্যায়ের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণসম‚হ উপস্থাপন করা হয় এবং গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যগুলো তুলে ধরেন মৃন্ময় সমদ্দার, সিনিয়র গবেষক, সিপিজে এবং সহযোগী গবেষক নাহিদা আক্তার ও হোসাইন মোহাম্মদ ওমর খৈয়াম। পলিসি ক্লিনিকে শিক্ষাবিদ, গবেষক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আমলা, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, এবং বিভিন্ন স¤প্রদায়ের নেতৃত্ব প্রদানকারীসহ বিভিন্ন অংশগ্রহণকারীরা পারস্পরিক মত বিনিময় ও আলোচনা করেন এবং নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের অসামঞ্জস্যতাগুলো চিহ্নিত করেন।
অধ্যাপক মুশতাক হোসেন, প্রধান পরামর্শক, আইইডিসিআর বলেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংক্রামকব্যাধিতে আক্রান্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিদের জন্য করণীয় অনেক কিছু আছে। সিপিজের এই গবেষণালব্ধ তথ্য তাদের জন্য নীতি প্রণয়নে সাহায্য করবে।
দেবাশীষ কুন্ডু, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, “বস্তির বাইরে শহরে অন্যান্য যে দরিদ্র মানুষ আছে তাদের কাছে পৌছানো যাচ্ছে না। তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীতে পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব আরো নিবিড় ভাবে লক্ষ্য করতে হবে। সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য এসব রিসার্চ উন্মুক্ত করতে হবে।“
মিজানুর রহমান, পরিচালক, বার্ড তাঁর মন্তব্যে বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্ন্তভ‚ক্তির ক্ষেত্রে তৃণম‚ল এর সাহায্য নেয়া প্রয়োজন। এই গবেষণার পরবর্তী ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের সাথে শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যবর্তী সম্পর্ক পর্যালোচনা করা হলে আমরা আরও উপকৃত হবো।“
তৌফিক জোয়ারদার, ভাইস চেয়ারপার্সন, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন এবং আর্ন্তজাতিক পরামর্শক, ডাবিøউএইচও বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে কোভিড-১৯ এর প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক।এছাড়া ত্রান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং এর বিকল্প কি হতে পারে তা ভাবতে হবে।
সালমা মাহবুব, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ সোস্যাইটি ফর চেঞ্জ অ্যান্ড এডভোকেসি নেটওয়ার্ক বলেন, “কোভিড পরবর্তী সময়ে চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়েছে। তাদের জন্য সরকারের কিছু উদ্যোগ নেয়া উচিত। তাদের জন্য নগদ সহায়তা গুলোর ক্ষেত্রে দ‚র্নীতি হচ্ছে যা তাদের দারিদ্র্যের জন্য দায়ী। প্রতিবন্ধীদের জন্য যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর যে আশ্বাস সরকার দিয়েছে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তী বাজেটের আগে এই বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।
তায়েবুল বাশার, চেয়ারপার্সন, সেভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশন বলেন, “খুবই যুগোপযোগী ডাটা উঠে এসেছে সিপিজের গবেষণায়। নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে এই তথ্য কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেটা বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে এবং টিকার সঠিক বন্টনের জন্য তৃনম‚ল পর্যায়ে নেতৃত্ব (চেয়ারম্যান, মেম্বার) কে প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়াও ইসলামিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ থাকাটা জরুরী বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই জরিপের পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন এবং এই গবেষণায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
আবদুল মজিদ প্রামাণিক, যুগ্ম পরিচালক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া তাঁর মন্তব্যে বলেন, “চরে বাল্যবিবাহ বেড়ে গিয়েছে, তারা টিকা নিতে আগ্রহী নয় কারন তাদের চর থেকে শহরে এসে রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।। সরকারের নীতি নির্ধারনে এই বিষয়গুলো উঠে আসতে হবে।“জুম লিয়ান আমলাই, সাধারন সম্পাদক, আদিবাসী ফোরাম বলেন, “দ‚র্গম এবং দ‚রবর্তী অঞ্চলে সরকারী সুযোগ সুবিধা কিভাবে কার্যকর ভাবে পৌঁছে দেয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।“
সিপিজে এর নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, ওবিই পলিসি ক্লিনিকের সভাপতিত্ব করেন এবং সবাইকে ম‚ল্যবান মতামত প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিজে-র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর কোভিড কালেক্টিভ প্ল্যাটফর্ম এবং এফসিডিও এর অর্থায়নে সিপিজে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এই গবেষণাটি পরিচালনা করছে।